ট্রাম্প আবারও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন, বদলে দিচ্ছেন মার্কিন জলবায়ু নীতি

Trump Inauguration

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও যুক্তরাষ্ট্রকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করছেন।

২০১৫ সালে গৃহীত এই আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা হ্রাস করার, যেন জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব এড়ানো যায়।

ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই চুক্তি আমেরিকার অর্থনীতির ওপর অন্যায্য বোঝা চাপিয়েছে। তিনি তার প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে এই চুক্তি থেকে প্রত্যাহার করেছিলেন। ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র আবার চুক্তিতে যোগ দেয়।

তবে সোমবার, ক্ষমতায় আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই, ক্যাপিটাল ওয়ান এরেনায় সমর্থকদের সামনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প আবারও চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

তিনি সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আমি এই অন্যায্য, একপাক্ষিক প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে অবিলম্বে সরে যাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র তার নিজস্ব শিল্প ধ্বংস করবে না, যখন চীন নির্বিচারে দূষণ করছে।”


পরিবেশবাদীদের উদ্বেগ এবং সমালোচনা

ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এসেছে যখন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিশ্বের নানা প্রান্তে প্রকটভাবে দেখা দিচ্ছে।

২০২৪ সাল ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ভয়াবহ দাবানল লস অ্যাঞ্জেলেসে ছড়িয়ে পড়েছে, এবং ফ্লোরিডা থেকে নর্থ ক্যারোলিনা পর্যন্ত বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি, তীব্র তাপপ্রবাহ এবং বন্যা পরিস্থিতি জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।

পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেছে।

র‍্যাচেল ক্লিটাস, যিনি ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টসের নীতি পরিচালক, বলেন, “আমরা ইতিমধ্যেই দেখছি খরা, ঝড়, তাপপ্রবাহ, বন্যা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির মতো ঘটনাগুলো কীভাবে মানুষের জীবন এবং অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র তার ভূমিকা পালন না করে, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”


বৈশ্বিক প্রভাব ও প্যারিস চুক্তির ভবিষ্যৎ

প্যারিস জলবায়ু চুক্তি বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্য নিয়েছিল। তবে, বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রচেষ্টা সেই লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছে না।

ইউরোপিয়ান ক্লাইমেট ফাউন্ডেশনের প্রধান লরেন্স টুবিয়ানা এই সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি আরও যোগ করেন, “আন্তর্জাতিক জলবায়ু কর্মসূচি একক কোনো দেশের রাজনীতি বা নীতির চেয়ে শক্তিশালী। আমাদের উচিত এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি করা, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের সম্মুখভাগে থাকা মানুষেরা মূল ভূমিকায় থাকবে।”


ট্রাম্পের জলবায়ু নীতি ও অন্যান্য উদ্যোগ

ট্রাম্পের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের জাতিসংঘ দূত আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার নোটিশ জমা দেবেন। যদিও চুক্তির নিয়ম অনুযায়ী, সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হতে এক বছর সময় লাগে।

এছাড়াও, ট্রাম্প একটি “জাতীয় জ্বালানি জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করেছেন এবং বহু বাইডেন-যুগের পরিবেশবিষয়ক নীতি বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে:

  • তেল এবং গ্যাস খাতের উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা।
  • নতুন উইন্ড ফার্মের (বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প) অনুমোদন স্থগিত রাখা।
  • আর্টিক ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রিফিউজের সুরক্ষার নীতিমালা পুনর্বিবেচনা।

ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে দুর্বল করতে পারে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সবুজ প্রযুক্তির সুযোগগুলো হাতছাড়া করার ঝুঁকি বাড়ায়।

এদিকে, তার মনোনীত পরিবেশ সংরক্ষণ এজেন্সির প্রধান লি জেলডিন স্বীকার করেছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের পেছনে মানুষের ভূমিকা রয়েছে। তবে তার ইঙ্গিত ছিল, ট্রাম্প প্রশাসন পরিবেশগত নিয়ম-নীতিগুলো শিথিল করতে আগ্রহী।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও বড় ঝুঁকির মুখে পড়বে।

#Trump, #ParisAgreement, #ClimatePolicy, #USPolitics, #ClimateChange, #EnvironmentalPolicy, #BreakingNews, #DonaldTrump, #Sustainability, #GlobalWarming, #EnergyPolicy, #PresidentialOrder, #GreenEnergy, #InternationalRelations, #COP28, #ClimateAction,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts